page contents
Cool Neon Green Outer Glow Pointer

মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতে কোবরা বাহিনী


কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন ফর রিজলিউট অ্যাকশন, সংক্ষেপে কোবরা। ভারতে মাওবাদী আন্দোলন দমনে এই বাহিনী গঠন করা হয়েছে। কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এটি একটি আধা সামরিক বাহিনী। এই বাহিনীর সব কমান্ডোই গেরিলা যুদ্ধে চৌখস। ছোট ছোট মাওবাদী অ্যাকশন স্কোয়াড বা ‘দলম’কে গভীর জঙ্গলে ঢুকে খতম করার জন্য এই বাহিনীকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে । তাই দিনে হোক বা রাতে, জঙ্গলের পথঘাট চিনে বের করতে এই কোবরা বাহিনীর কোনো অসুবিধা হয় না। বছরে ১৩০০ কোটি
টাকা এই বাহিনীর জন্য বরাদ্দ। বাহিনীর মূল মন্ত্র হলো : জয়, নচেৎ মৃত্যু।
বিশেষ সূত্রের খবর, ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে এই মুহূর্তে ১০টি কোবরা ইউনিট রয়েছে। কমান্ডো সংখ্যা কমপক্ষে দশ হাজার। ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১১ পর্যন্ত এই বাহিনী আধা-সেনার প্রতিষ্ঠা দিবসের প্যারেডে সেরা বাহিনীর পুরস্কার জিতে এসেছে।

২০০৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাওবাদী দমনের জন্য কোবরা বাহিনী গঠনের সবুজ সংকেত দেয়। লুকানো বিস্ফোরকের খোঁজ, জঙ্গলে দিনের পর দিন না খেয়েও বেঁচে থাকা, খালি হাতে শত্রু হত্যা, জিপিএস-ট্র্যাকিংয়ে ধরা না-পড়ার সহজাত দক্ষতা অর্জন করতে হয় কোবরা কমান্ডোদের। আজ পর্যন্ত এই কোবরা কমান্ডোরা হাজারের বেশি মাওবাদী জঙ্গিকে গ্রেফতার বা হত্যা করেছে। ২০১১ সালে কোবরা কমান্ডো আশিসকুমার তিওয়ারি শৌর্যচক্রে সম্মানিত হন। তবে কোবরা গঠনে কেন্দ্র উৎসাহিত হয়েছিল চন্দ্রবাবু নাইডুর আমলে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের মাওবাদী দমনের সাফল্য দেখে৷ দেশের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে চন্দ্রবাবু নাইডুই প্রথম মাওবাদী সন্ত্রাস দমনের জন্য বিশেষ পুলিশ বাহিনী গড়ার গ্রিন সিগন্যাল দেন৷অতঃপর অন্ধ্রের পুলিশ কর্তারা একটি বাহিনী গড়েন৷ নাম দেয়া হয় ‘গ্রে হাউন্ড ফোর্স’৷ এই বাহিনী মাওবাদী মোকাবিলায় অসাধারণ সাফল্যও পায়৷ওই রাজ্যের মাওবাদী উপদ্রুত নাল্লামাল্লার জঙ্গলে কুম্বিং অপারেশন চালিয়ে ‘গ্রে হাউন্ড’ দেশজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছিল৷
যেকোনো কমান্ডো বাহিনীর মতো গভীর ঘন জঙ্গলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উপযুক্ত খাদ্য ছাড়াও টিকে থাকতে এই বাহিনী বিশেষভাবে সক্ষম। এক-একজন কোবরা অন্তত ১০ রকমের অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র অবলীলায় চালাতে পারেন।

জানতে চান, এক-একজন কোবরা কমান্ডো কী কী অস্ত্র ব্যবহারে পারঙ্গম? নিচে তার সম্পূর্ণ তালিকা দেয়া হলো :

১. ইনস্যাস রাইফেল
২. যে কোনও টাইপের কালাশনিকভ
৩. এক্স-৯৫
৪. ব্রাউনিং হাইপাওয়ার
৫. গ্লক রিভলভার
৬. হেকলার অ্যান্ড কোচ এমপি ৫-এর মতো সাবমেশিনগান
৭. কার্ল গুস্তাভ রিকয়েললেস রাইফেল
৮. ড্রাগনাভ এসভিডি
৯. মাউজার এসপি ৬৬
১০. হেকলার অ্যান্ড কোচ এমএসজি ৯০ স্নাইপার গান

কোবরার জন্য সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র বানায় ইন্ডিয়ান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনে।
কোথায় ট্রেনিং হয় কোবরাদের?
ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য গঠিত ‘কাউন্টার-ইনসারজেন্সি অ্যান্ড জাঙ্গল ওয়রফেয়ার স্কুলে’। এই প্রশিক্ষণ শিবিরটি রয়েছে মিজোরামের বৈরাংতিতে। বাইরের বিভিন্ন দেশ, এমনকি আমেরিকা থেকেও সেনা কমান্ডোদের পাঠানো হয় এই শিবিরে, জাঙ্গল ওয়রফেয়ার শিখতে৷ আরেকটি শিবির রয়েছে অসমের শিলচরে। সেটি আধাসেনার জন্য গঠিত জঙ্গি দমন প্রশিক্ষণের স্কুল। এখানে শেখানো হয় আর্ট অফ ‘ক্যামোফ্লেজ’। অর্থাৎ কী করে শত্রুর চোখের সামনে থেকেও ‘অদৃশ্য’ থাকতে হয়। পাশাপাশি শেখানো হয় বিমান থেকে প্যারাস্যুটে ঝাঁপিয়ে পড়াসহ দীর্ঘমেয়াদি নজরদারির কৌশল। সেনা শিবিরে অন্তত ছমাস কোবরা কমান্ডোদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
২০১৩ সালের ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসের প্যারেডে প্রথম অংশ নিতে দেখা যায় এলিট কোবরা কমান্ডোদের। সে বছর ভারতের বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ১৪৭ জন কোবরা কমান্ডো সেদিন মার্চ পাস্টে অংশ নেন। কোবরা কমান্ডোদের পোশাক হালকা ধূসর রঙের। বুকে সিআরপিএফের লোগো। মার পাত (মেরিন প্যাটার্ন) ভঙ্গিতে প্যারেড করেছিলেন এলিট কমান্ডোরা। কোবরা বাহিনীর হেলমেট অনেকটা মার্কিন সেনার পার্সোনেল আর্মার সিস্টেম-গ্রাউন্ড ট্রুপসের মতো। আফগানিস্তানে যুদ্ধের জন্য এই বাহিনী পাঠিয়েছিল আমেরিকা।
বড় সাফল্য : ২০০৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দান্তেওয়াড়ায় অপারেশন চালিয়ে অন্তত ৪০ জন মাওবাদী হত্যা।
ঝাড়খণ্ডের সিংভূমে কোবরার আটটি টিমের মোট ২০৩ জন কমান্ডো ১১-১৫ জুন পর্যন্ত চালিয়ে সব কটি মাও ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়।
২০১০ সালের ১৫-১৬ জুন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় লালগড় অঞ্চলের দুলি জঙ্গলে অপারেশন চালিয়ে আট মাওবাদীকে নিধন করার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে এই বাহিনী।
বিশেষ দক্ষতা : সন্ত্রাস মোকাবিলা, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভিভিআইপিদের সুরক্ষাদান, আধা সামরিক আইন বলবৎ, দাঙ্গা দমন, স্পেশাল ওয়েপন অপারেশন।
মূল দফতর : ওল্ড সেক্রেটারিয়েট, সিভিল লাইন্স, নয়াদিল্লি
অধুনা ডাইরেক্টর জেনারেল : আইপিএস দিলীপ ত্রিবেদী।

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger Widgets