page contents
Cool Neon Green Outer Glow Pointer

যুগে যুগে মানুষ যখন অমরত্বের সন্ধানে/When people are forever in search of immortality

অমরত্ব লাভের নেশায় মানুষ সেই আদিম কাল থেকেই বিভোর রয়েছে আজও পর্যন্ত। কারও কাছে অনন্ত কালের জন্য জীবন প্রত্যাশাই হলো অমরত্ব, কারও কাছে মৃত্যুর পর তাঁর কীর্তি দিয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার নামই হলো অমরত্ব আর কারও কাছে তার বয়স ধরে রাখার মাঝেই অমরত্বের স্বাদ কিংবা মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম লাভের প্রত্যাশাই হয়তবা কারও কাছে অমরত্ব। মানুষের মরদেহকে মমি করে রাখার সময়কাল থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের ক্রিওনিক্স পদ্ধতি স
বই মানুষের অমরত্ব লাভের নেশার প্রতিফলন স্বরূপ। এমনকি র‍্যাপামাইসিন নামের এক ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে মানুষকে চিরযৌবন দেয়ার প্রত্যয়ে যা মানবদেহের কোষের উপর ক্রিয়াশীল। অসংখ্য কল্প কাহিনী লেখা হয়েছে এই অমরত্বকে কেন্দ্র করে। এমনকি বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছে সময়কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। জেমস ক্যামেরুন নির্মিত এভাটার চলচ্চিত্রটির কথাও ধরা যেতে পারে, যেখানে মানুষকে যন্ত্রের সাহায্যে দেয়া হয়েছে এক ভিন্ন মানব রূপের। যার পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে যন্ত্রের মাধ্যমে ক্রিয়াশীল। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড তার বিখ্যাত নোভেল শী এবং রিটার্ণ অফ শী-তেও দেখিয়েছেন অমরত্ব লাভের নেশায় আয়েশা নামক এক চরিত্রের, যে কিনা বেঁচে থেকেছে অনন্ত কাল ধরে শুধু মাত্র তার ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে পাওয়ার জন্য। কবি জীবনানন্দ দাশ প্রিয় স্বদেশ ভূমিকে ভালোবেসে লিখেছেন;

আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে-এই বাংলায় 
হয়তো মানুষ নয়-হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে, 
হয়তো ভোরের কাক হ'য়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে...
 





হিন্দু পুরাণ এবং মিশরীয় পুরাণের দুইজন দেবতার মূর্তির মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান 

হিন্দু ধর্মে দেবতা বিষ্ণু তাঁর দশটি রূপে আবির্ভূত হয়েছেন মানুষের কল্যাণে ব্রত হয়ে। বিষ্ণুর দশ অবতার হলো;

১. মৎস্য - মাছের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
২. কূর্ম - কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৩. বরাহ - শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৪. নৃসিংহ - অর্ধনরসিংহ রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৫. বামন - বামনের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৬. পরশুরাম - পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৭. রাম - রামচন্দ্র অযোধ্যার রাজপুত্রের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৮. কৃষ্ণ - দ্বাপরযুগে ভ্রাতা বলরামের সঙ্গে অবতীর্ণ
৯. বুদ্ধ - কলিযুগে অবতীর্ণ
১০. কল্কি - সর্বশেষ অবতার, হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কলিযুগের অন্তে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে। 

আবার, শয়তান মানুষের অনিষ্ট সাধন করে তাদেরকে আল্লাহ্‌র পথ থেকে বিচ্যূত করার প্রত্যয়ে খোদ মহান আল্লাহ্‌ তাআলার কাছেই চেয়েছে কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকার শক্তি। মানব সভ্যতার শুরু থেকেই চলে আসছে অমরত্বের নেশা। অমরত্বের সন্ধানে মানুষ বহু প্রাচীন কাল থেকেই করে আসছে আলকেমি নামক এক বিশেষ শাস্ত্রের চর্চা। 

আলকেমি শব্দের উৎপত্তি আরবি আল কিমিয়া শব্দ থেকে যার প্রাচীন গ্রিক রূপ কেমিয়া। আলকেমি হচ্ছে সেই শাস্ত্র যার চর্চার মাধ্যমে লাভ করা যায় পরিপূর্ণতা, ধাতুকে পরিণত করা যায় স্বর্ণে, আর মানুষ লাভ করতে পারে অমরত্ব। আলকেমিতে দরকার একটি অদৃশ্য আধ্যাত্মিক শক্তির অতিপ্রাকৃত সাহায্য যেটা ছাড়া কোন আলকেমিক্যাল কাজ সম্পূর্ণ হবে না। এ আধ্যাত্মিক সাহায্য আসতে পারে ভাল দিক থেকে অথবা খারাপ দিক থেকে। যখন খারাপ শক্তি ব্যবহার করে করা হয় তখন তাকে বলা হয় ডার্ক আর্টস। 



গ্রীসে মারিয়া ইতিহাসের প্রথম আলকেমিস্ট হিসেবে পরিচিতি। জন্মসূত্রে ইহুদী হওয়ায় ডার্ক আর্টস সম্পর্কে তাঁর জানা ছিলো। মিশরের মেমফিস নগরীতে তাঁর সাথে পরিচয় হয় ডেমোক্রিটাস নামের একজনের সাথে, যাকে তিনি বাস্তব রসায়ন নিয়ে হালকা ধারণা দেন। ইতিহাসে ডেমোক্রিটাসের নাম এখনও স্মরণীয়। মারিয়া স্বর্ণ বানাতে পারতেন। মুসলিম বিশ্বে আলকেমি সূচনা করেন জাবির ইবনে হাইয়ান এবং প্রথমবারের মতো তিনি আধ্যাত্মিক শক্তি হিসেবে আল্লাহর সাহায্যের কথা উল্ল্যেখ করেন। তারপরের সময়টা আরেক কিংবদন্তী নিকোলাস ফ্লামেলের। যিনি তাঁর বইয়ের দোকানে একদিন এক হকারের কাছে পান আলকেমির উপর লেখা ইহুদী যুবরাজ আব্রাহাম এর একটি পান্ডুলিপি। তারপর তিনি ছুটতে থাকেন অমরত্বের সন্ধানে। একটা সময় তিনি গবেষণা করে পারদকে রূপোয় পরিণত করতে সক্ষম হন। তারপর পরিণত করতে সক্ষম হন নিখাদ স্বর্ণে। তাঁর আলকেমি গবেষণার আসল লক্ষ্য ছিলো অমরত্ব লাভ। তাঁর স্ত্রী পেরেনেল এর মৃত্যুর পর জীবনের শেষ কয়েকটা দিন তিনি আলকেমির বই লিখেই কাটিয়েছেন। এই সময়ে তিনি কবরস্থানে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি খুব স্পষ্ট করে লিখে দিলেন, তাঁকে কোথায় কীভাবে কবর দিতে হবে। তাঁর কবরের এপিটাফে কী লেখা থাকবে সেটাও প্রস্তুত করে ফেললেন তিনি। সেই পাথরের ফলকে থাকবে অনেক অনেক চিহ্ন, আর একটি সূর্যের ছবি, একটি চাবির ছবি আর একটি বন্ধ বই এর ছবি সাথে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনারত ভঙ্গিতে আছেন এমন অবস্থায়। অবশেষে একদিন জানা গেলো ফ্লামেল মারাই গিয়েছেন। কিংবদন্তী আছে যে, একবার কিছু ডাকাতদল দুইশত বছর আগের নিকোলাসের কবর থেকে তাঁর কফিন চুরি করে। কিন্তু কবরের ভিতরে কফিন ছিলো একদম ফাঁকা। কফিন ফাঁকাই ছিলো নাকি কোন কালেই নাকি এখানে কোন দেহ ছিলো না। নিকোলাস যদি সেদিনই মারা গিয়েই থাকেন, তবে তাঁর কবর এখানে হয়নি। এটা ছিলো মূলত লোক দেখানো। কিন্তু আসলে নিকোলাসের সাথে কি হয়েছিলো, তাঁর গবেষণালব্ধ লিখিত বইয়ের পরবর্তীতে কি হয়েছিলো, কে বা কাদের তিনি সেসব দিয়ে গিয়েছিলেন কিংবা কারা সেসব পেয়েছিলো সব কিছুই রহস্য হয়ে রয়ে গেছে আজও পর্যন্ত।



আলকেমির চূড়ান্ত পর্যায় হলো একটি পদার্থ তৈরি করা, যেটি সম্পর্কে বিশ্বাস করা হয়, সেই পদার্থ দিয়ে মহাবিশ্বের সব রহস্যের সমাধান পাওয়া যাবে। সেই পদার্থের রয়েছে দুটি অংশ, প্রথমটি কঠিন আর দ্বিতীটি তরল। 

পরশ মণি বা পরশ পাথর সম্পর্কে প্রাচীন কিছু পাণ্ডুলিপি থেকে পাওয়া যায়। দুই রকমের পরশমণির কথা জানা যায়। একটি সাদা, আরেকটি লাল। সাদা পাথরের শক্তি কম আর সেটা ধাতুকে পরিণত করতে পারে রূপায়। লাল পাথরের শক্তি বেশি আর সেটা ধাতুকে স্বর্ণে পরিণত করতে পারে। লাল পাথর গুড়ো করলে এ পাথরের রঙ কমলা বা লাল এর মতো দেখায়, কিন্তু কঠিন অবস্থায় টকটকে লাল রং এর মতো দেখায়। তখন এটি থাকে স্বচ্ছ আর কাঁচের মতো। 

অমৃত সুধা বা এলিক্সির অফ লাইফ। সাদা রঙের তরল কয়েক ফোঁটা পান করলে দীর্ঘায়ু লাভ করা যায়। তবে এটিকে অমরত্বের জন্যই মূলত বানানোর চেষ্টা করা হতো। কিন্তু আসলে অমরত্ব দেয়ার মতো কোন পদার্থ তৈরি করা সম্ভব না। বড়জোর দীর্ঘায়ু হতে পারে। ফারসিতে একে বলা হয় আবে হায়াত। 



অমরত্বের সুধা বা আবে হায়াত। ইসলাম ধর্ম অনুসারে কোহেকাফ শহরের এক অমরত্বের ঝর্ণার কাহিনী। কোহেকাফ জিনদের রাজধানী শহর। জিনদের সম্পর্কে যা জানা যায়, তারা নাকি হাজার বছরের জীবন লাভ করে থাকে। তবে কি তারা এই কোহেকাফের ঝর্ণার পানি খেয়েই হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকে ! একটা সময় মানুষের আয়ু ছিলো দীর্ঘ বছরের। কিন্তু কালে কালে মানুষের সেই আয়ুকাল কমে আসলেও অমরত্বের নেশা কাটেনি। তবে আয়ুকাল যে একই যুগে সবার সমান সেটাও সঠিক নয়। কেউ হয়ত জন্মের সাথে সাথেই মারা যাচ্ছে কেউবা সত্তুর বছর, কেউবা বেঁচে থাকছে একশত বছর পর্যন্ত। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কয়েকজন নবী রাসূলদের আয়ুকাল দেখে নেয়া যাক;

হযরত আদম (আঃ) - ১০০০ বছর 
হযরত নূহ (আঃ) - ৯৫০ বছর
হযরত শোয়েব (আঃ) - ৮৮২ বছর
হযরত সালেহ (আঃ) - ৫৫৮ বছর
হযরত জাকারিয়া (আঃ) - ২০৭ বছর
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) - ১৯৫ বছর
হযরত সুলাইমান (আঃ) - ১৫০ বছর
হযরত ইসমাঈল (আঃ) - ১৩৭ বছর
হযরত ইয়াকুব (আঃ) - ১২৯ বছর
হযরত মূসা (আঃ) - ১২৫ বছর
হযরত ইসহাক (আঃ) - ১২০ বছর
হযরত হারুন (আঃ) - ১১৯ বছর
হযরত ইউসূফ (আঃ) - ১১০ বছর
হযরত ঈসা (আঃ) - ৯৫ বছর
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) - ৬৩ বছর

বাদশাহ সিকান্দার যুলকারনাইন এর রাজত্বকাল। একদিন খিজির (আঃ) জানালেন সমুদ্রের ওপারে একটি অন্ধকারের দেশ আছে। সেখানে সারাক্ষণ আঁধার থাকে। সেখানে এক গুহায় নাকি আবে হায়াতের ঝর্ণা আছে। সে পানি খেলে কেউ নাকি মরে না। যুলকারনাইন সিদ্ধান্ত নিলেন সেই পানির খোঁজে যাবেন। তিনি সাথে প্রায় ৪০০০ যুবক নিলেন। তিনি তাঁর উজির খিজির (আঃ) আর তাঁর আরেক সভাসদ ইলিয়াসকেও বললেন তাঁর সাথে আসতে। সাথে অনেক দিনের খাদ্য মজুদ নেয়া হলো। তবে, যাবার আগে সবাইকে সতর্ক করা হলো সেই মানবহীন এলাকাতে তাঁরা যেন কোন আগুন বা সেরকম আলো দিয়েনা যান। যাই হোক, তারা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সেই আঁধারে প্রবেশ করলেন। কোহেকাফ এর পার্বত্য এলাকার মাঝে সেই নির্দিষ্ট গুহা খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব। যুলকারনাইন দলে দলে ভাগ হয়ে খোঁজা শুরু করতে বললেন। আর তিনি একা যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু খিজির (আঃ) আর ইলিয়াস দুজন একসাথে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। যুলকারনাইন এক দিকে আর তাঁরা অন্য দিকে গেলেন। বাকিরাও বিভিন্ন দিকে গেল। আনুমানিক প্রায় এক সপ্তাহ সময় পার হয়ে গেল। বিভিন্ন রাত তাঁরা বিভিন্ন গুহায় কাটালেন। আর কোন দলের সাথে তাঁদের দেখাও হল না। একদিন ক্লান্ত হয়ে এক গুহায় আশ্রয় নিলেন তাঁরা দুজন। এরপর খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। শুকনো মাছ বের করলেন। খিজির (আঃ) পাশের এক ঝর্ণায় হাত ধুয়ে আসলেন। এরপর মাছটা দুভাগ করতে হাতে নিলেন। যেই তাঁর হাতের পানি মাছের গায়ে লাগলো সাথে সাথে সেই মরা মাছ জীবিত হয়ে উঠলো। তিনি বুঝলেন তাঁরা অমরত্বের ঝর্ণা খুঁজে পেয়েছেন। তিনি সেখান থেকে হাত দিয়ে পানি পান করলেন। এরপর ইলিয়াসকে ডেকে তাঁকেও খাওয়ালেন। তখন দৈবজ্ঞানে তাঁদের জানানো হলো, তাদের আয়ু কেয়ামত পর্যন্ত। তাঁরা যেন এখন থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকেন। আর বাদশাহ এ পানি খেতে পারবেন না। তাঁরা সেখান থেকে চলে গেলেন। এরপর থেকে তাঁদের অবস্থান কেউ জানত না। যাই হোক, এরপর বাদশাহ আরও অনেকদিন পর সেই গুহা আর সেই ঝর্ণা আবিষ্কার করেন। এরপর সাথে করা আনা পেয়ালাতে করে তিনি পানি উঠিয়ে পান করতে গেলেন। কিন্তু পান করতে পারলেন না। তাঁর মনে হলো, তিনি একা এই পৃথিবীতে বেঁচে থেকে কী হবে ? তাঁর স্ত্রী পুত্র কন্যার সাথেই যদি তিনি না বাঁচলেন, তাহলে সে জীবনের আর অর্থ কী ? তিনি বেঁচে থাকবেন আর তাঁর স্ত্রী পুত্র কন্যা তাঁর চোখের সামনে মারা যাবে, সে হতে পারে না। তাঁরা সবাই একসাথে এ পানি খাবেন। এ কথা ভেবে তিনি সেই ঝর্ণা থেকে পানি ভরলেন তাঁর মশকে। এরপর ফিরতি যাত্রা শুরু করলেন। অন্ধকার রাজ্যে পথ ফিরে পেতে অনেক কষ্ট হলো। যখন তীরে ফিরে এলেন তখন দেখলেন অনেকেই ফিরতে পারেনি এত লম্বা সময়েও। হয়ত খাদ্যের অভাবে অনেকে মারাও গেছে যারা আঁধারে প্রবেশ করেছিলো। এরপর যারা বাকি আছে তাঁর বাহিনীর তাদের নিয়ে তিনি সমুদ্রপথে সরাসরি নিজের দেশে ফিরলেন। তিনি মশক থেকে পুরো পানি একটা সুন্দর পেয়ালায় ভরলেন। এরপর সেই পেয়ালা নিয়ে দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলেন তাঁর পরিবারের দিকে। কিন্তু ঘরের দরজার চৌকাঠে হোঁচট খেলেন। আর হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেল তাঁর পেয়ালা। আর উত্তপ্ত মেঝে শুষে নিলো সবপানি। তিনি তাকিয়েই থাকলেন সেইদিকে। তাঁর ভাগ্যে ছিলো না আবে হায়াতের পানি।

এরপর খিজির (আঃ) কে দেখা যায় মূসা (আঃ) এর সময়ে। বায়হাকি হাদিস গ্রন্থ মতে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জানাজার সময় খিজির (আঃ) এর উপস্থিত হয়েছিলেন এবং আবু বকর (রাঃ) আর আলী (রাঃ) তাঁকে চিনতে পারেন। তিনি তাদেরকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন। তাফসিরকারকদের মতে, ভবিষ্যৎবাণী মতে যে লোকটি দাজ্জালের সাথে তর্কে যাবে সেই লোকটিই হবেন খিজির (আঃ)।

কিন্তু এখানে একটি বিষয় খুব লক্ষণীয়, ইতিহাসে অনেক জায়গায় খিজির (আঃ) এর আরেকজন সাথী ইলিয়াস যিনিও পেয়েছিলেন অমরত্বের স্বাদ তাঁর ইতিহাস চর্চা তেমন কোন রেওয়াতে পাওয়া যায়না। অনেক রেওয়াতে ইলিয়াস নামের কেউ যে খিজির (আঃ) এর সাথী ছিলেন তেমন কিছুই উল্ল্যেখ নেই। আর উল্ল্যেখ থাকলেও তাঁর পরবর্তী কোন ঘটনার উল্ল্যেখ পাওয়া যায়না তেমন ভাবে। যদি খিজির (আঃ) এর মতো ইলিয়াস নামের সেই ব্যাক্তিও অমরত্বের স্বাদ পেয়ে থাকেন তবে তিনি এখন কোথায় আছেন ? কিংবা কেয়ামতের আগে তাঁর দেখা কি পাওয়া যাবে ? যেভাবে খিজির (আঃ) এর দেখা পাওয়া যাবে। কিছু কিছু রেওয়াতে এসেছে খিজির (আঃ) নাকি ইলিয়াসের সাথে দেখা করেন। যাই হোক আমার ভাবনা এখানে ইলিয়াসের মাঝে এসে রহস্য সৃষ্টি করে। জন্ম দেয় অনেক প্রশ্নের। 



মিশরীয় পুরাণ অনুযায়ী দেবী আইসিস পুত্র হোরাসও নাকি জীবনের এক পর্যায় এসে উধাও হয়ে যান। বিশ্বাস করা হয় যে হোরাস জীবিত আছেন। তিনি আবারও ফিরে আসবেন। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী বিশ্বাস করা হয় দাজ্জাল আসবে কেয়ামতের আগে। তার জন্মের কথা না বলে বলা আছে আবির্ভাবের কথা। এমনকি তার পৃথিবীতে অবস্থানের সময়কাল পৃথিবীর সময়কালের সাথে পারস্পরিক বিরোধী। তবে ধারণা করা যায় দাজ্জালের জন্ম বহু আগেই হয়েছে। সে কোথাও আত্মগোপন আছে। সময় হলে তার আবির্ভাব হবে। এমনকি ইসলাম ধর্ম এবং খ্রিষ্টান ধর্ম অনুযায়ী ঈসা (আঃ)/যীশু ফিরে আসবেন আবারও এই পৃথিবীতে। তিনি বেঁচে আছেন। এমনকি তাঁর হাতেই মৃত্যু হবে দাজ্জালের। এমনকি হিন্দু ধর্মেও বলা আছে দেবতা বিষ্ণু পৃথিবীর শেষ সময়ে কল্কি রূপে আবির্ভূত হবেন। সে যাই হোক, সবগুলো ঘটনা জন্ম দেয় নানা রকমের রহস্যের। একদিন হয়ত ঠিকই সব রহস্যের জট খুলে যাবে ঠিকই। যীশুর কথা আসতেই মনে হলো হলি গ্রেইলের কথা। অমরত্ব লাভের আরেকটি পুরাণ হলো হলি গ্রেইল। হলি গ্রেইল হলো সেই পেয়ালা যেটাতে করে যীশুর ক্রুশবিদ্ধ দেহের রক্ত ধারন করা হয় আর যেটাতে করে পানি খেলে অমরত্ব পাওয়া যাবে।



বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী, কেয়ামতের পূর্বে ঈসা (আঃ) এবং দাজ্জালের মাঝে যে যুদ্ধ হবে সেগুলো হবে ২০৬০ সালের আশেপাশে। এক পাণ্ডুলিপিতে বিজ্ঞানী নিউটন লিখে গেছেন, তিনি হিসেব করে বের করেছেন ২০৬০ সালের আগে কোন মতেই কেয়ামত হবে না। 



স্যার আইজ্যাক নিউটন বিশাল গবেষণা করেন সলোমনের এ টেম্পল নিয়ে। তিনি হিব্রু থেকে নিজে সব অনুবাদ করেন। নিজের হাতে টেম্পল অফ সলোমনের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন আঁকেন। জেরুজালেমের বাইতুল মুকাদ্দাস একাধারে মুসলিম, ইহুদী আর খ্রিষ্টান সবার কাছেই পবিত্র। নবী সোলায়মান (আঃ) এর নির্মিত উপাসনালয় টেম্পল অফ সলোমন ছিলো এখানে। সেটা ধ্বংস করে দেবার পরে ধ্বংসস্থলে বর্তমান সোনালি গম্বুজের এক উপাসনালয় গড়ে তোলা হয়। তবে সোনালি গম্বুজের উপাসনালয়টি আল আক্সা মসজিদ নয়। মূল আল আক্সা মসজিদ ভেঙে এখন সেখানে নতুন করে সলোমন টেম্পল বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। মসজিদুল আল আক্সার কাছের এ জায়গা থেকেই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মেরাজ সংঘটিত হয়। যা বাইতুল মুকাদ্দাস নামে হিব্রু ভাষায় পরিচিত। এখানে আছে ডোম অফ দ্যা রক কিংবা মসজিদ কুব্বাতুস সাখ্রা। সাখ্রা হলো পাথর বা রক। এখন যে গম্বুজ এর মতো আছে সেটা নবীজির সময় ছিলো না। আর উপরের এই জায়গা থেকেই প্রিয় নবী মেরাজে যান বোরাকে চড়ে। যে পাথরে চড়ে যান, সেটা ওখানে আছে। সেই পাথরের নামেই এর নাম করণ করা হয়। উল্লেখ্য, টেম্পল অফ সলোমনেই সেই আর্ক অফ দ্যা কভেন্যান্ট সিন্দুক রক্ষিত থাকত। একটা সময় নাইট টেম্পলারদের আর্ক অফ দা কভেন্যান্ট সিন্দুক খুঁজে বের করা আর সাথে সাথে উপকথার হলি গ্রেইল খুঁজে বের করাও ছিলো প্রধান লক্ষ্য। নাইট টেম্পলাররা টেম্পল অফ সলোমনের কাছে থাকার জন্য দ্বাদশ শতকে তাদের উপাসনালয় বানায় বাইতুল মুকাদ্দাসের মসজিদুল আক্সাকে। 



ইহুদীরা অনেক দিন ধরে টেম্পল অফ সলোমন আবারও বানাতে চাচ্ছে। এখন যেটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া মূল আল আক্সা মসজিদ সেটা পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারলেই তারা সেটা বানাতে পারবে। তাদের ভবিষ্যৎবাণী মতে, তাদের মসিহ দাজ্জাল জেরুজালেমের এই টেম্পল থেকেই পৃথিবী শাসন করবে। তারপরেই ইমাম মাহদির সাথে যুদ্ধ হবে আর হযরত ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে হত্যা করবেন। বাইবেলে অনুসারে এ যুদ্ধের নামই আরমাগেডন।



বিজ্ঞানি নিউটন তার যত বৈজ্ঞানিক গবেষণা করেছেন তারচেয়ে অধিক সময়ে তিনি নিমগ্ন হয়ে থাকতেন ভিন্ন এক জগৎ নিয়ে। তবে সে জগতের গবেষণা তার মৃত্যুর আগে প্রকাশিত হয়নি। জীবনের এক পর্যায় তিনি বাইবেলের তাফসির লেখা শুরু করেন। তবে এ লেখা প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর অর্ধ শতাব্দী পর। স্যার আইজ্যাক নিউটন ঘুমের মধ্যেই মারা যান। মারা যাবার পর তাঁর চুল পরীক্ষা করে অত্তাধিক পারদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে নিউটনের অপ্রকাশিত লেখাগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। আলকেমির জন্য জীবনের বেশির ভাগ সময় পার করে দেয়া নিউটনের অজানা সব দিক প্রকাশ পেতে থাকে। দশ লক্ষেরও বেশি শব্দ নিউটন লিখে গেছেন কেবল এই আলকেমির ফিলোসফারস স্টোন এর উপর। একবার তাঁর ল্যাবরেটরি আগুনে পুড়ে যাবার পর তিনি ভেঙে পড়েন। তাঁর বেশির ভাগ আলকেমিক্যাল লেখা পুড়ে যায় সেই আগুনে। বলা হয়, দুর্ঘটনাবশত তাঁর কুকুর ডায়মন্ড সেই আগুনের সূত্রপাত করে। আগুন লেগে যায় নিউটনের সব গবেষণায়। তিনি আবারো তাঁর কাজ শুরু করেন। একটা সময় নিউটন পাগলামির লক্ষণ প্রকাশ করা শুরু করেন। আর এর জন্য দায়ী ছিলো অতিরিক্ত পারদের উপস্থিতি। লাল গুঁড়ো প্রস্তুতির সূত্রগুলোর ধাপগুলো ছিল পারদে বারবার তাপ প্রয়োগ এবং শীতলীকরণ প্রক্রিয়া। এজন্যই তাঁকে বেশি সময় কাটাতে হয়েছিলো পারদের সংস্পর্শে। তাঁর মৃত্যুর পর সেই লাল গুঁড়ো এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিংশ শতাব্দীতে খুঁজে পাওয়া নিউটনের এসব আলকেমিক্যাল পাণ্ডুলিপি পড়ে যেটা বোঝা গেছে তা হলো, নিউটনের আলো আর মহাকর্ষ বিষয়ক গবেষণাগুলো আলকেমিক্যাল গবেষণা থেকেই পাওয়া। বিজ্ঞানের প্রতিটি স্তরেই রয়েছে তাঁর অসামান্য অবদান। কিন্তু তাঁর সারা জীবনের যত গবেষণা তার অল্প একটা অংশই ছিল বিজ্ঞান নিয়ে। তারচেয়ে অনেক বেশি সময় তিনি ব্যয় করেছেন অতীন্দ্রিয় আর অতিপ্রাকৃত অমরত্বের সন্ধানে। শেষ বয়সে পাগল হয়ে মারা যান ইতিহাসের শেষ আলকেমিস্ট স্যার আইজ্যাক নিউটন। 

তথ্যসূত্রঃ

উইকিপিডিয়া, লাইট অফ ইসলাম, রিচার্ড ক্যাসেরোর লেখা রিটেন ইন স্টোনঃ ডিপার ট্রুথ, এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদ এর আর্টিকেল। 

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger Widgets