page contents
Cool Neon Green Outer Glow Pointer

সঙ্গীতের স্বপ্নপুরুষ


'শুরুটা যেভাবে
১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি বর্তমান এ আর রহমান জন্মেছিলেন এ এস দিলীপ কুমার নামে। বাবা তামিল সঙ্গীত পরিচালক আর কে শেখর এবং মা গৃহবধূ কস্তুরী দেবী। রহমানের বাবা মোটামুটি নামী সঙ্গীত পরিচালকই ছিলেন। বাবার কাছ থেকে সঙ্গীত শিক্ষা নেয়ার খুব বেশি সুযোগ পাননি। কারণ, ১৯৭৬ সালে মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। তার পর থেকে মাকে কেন্দ্র করেই বেড়ে উঠেছেন রহমান। বাবার দুটো কি-বোর্ড ভাড়া দিয়ে তখন
সংসার চলত তাদের। ১১ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন অর্কেস্ট্রা গ্রুপের সাথে কি-বোর্ড বাজাতে শুরু করেন রহমান। সঙ্গীতকে ভালোবেসে নয়, পেট চালানোর জন্য। আর এভাবেই আস্তে আস্তে তার শয়নে-স্বপনে জাগরণে বাসা বাঁধতে শুরু করে সপ্তসুর। ১১ বছর বয়স থেকেই অনেকে আমাকে চিনত। আমার কাজ ছিল, ফরমায়েসি ফিল্মি গান কি-বোর্ডে বাজানো। তাই ওই বয়সেই বেশ পরিচিত মুখ হয়ে গিয়েছিল এ আর রহমান। ১১ থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত অনেক কিছুই করেছেন তিনি। ‘রুটস’ বলে একটা ব্যান্ডে বন্ধু শিবমণি, জোজো, জন অ্যান্থনি এবং বাজাকে নিয়ে পারফর্ম করতেন। তামিল সঙ্গীত পরিচালক ইলায়া রাজার ট্রপে কি-বোর্ড প্লেয়ার হিসেবে কাজ করতেন। এ সময় থেকেই বিজ্ঞাপনের জিঙ্গলসে সুর দেয়া শুরু করেন রহমান। বেশ কিছু তথ্যচিত্রে সুরও দিয়েছেন। একটি কফির বিজ্ঞাপনই তার জীবন পাল্টে দেয়।

এ আর রহমানের ব্যক্তিজীবন
৬ জানুয়ারি ১৯৬৭-তে মাদ্রাজে সঙ্গীতজ্ঞ আর কে শেখরের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম যখন হয় তিনি তখন তার নাম রাখেন এ এস দিলীপ কুমার (A S Dileep Kumar)।
আর কে শেখর তখন মালয়ালম মুভিতে সুরকার রূপে কাজ করছিলেন। তার ছোট ছেলে দিলীপকে সাথে নিয়ে মুভি স্টুডিওতে যেতেন। দিলীপের বয়স যখন মাত্র চার তখন তাকে দক্ষভাবে হারমোনিয়াম বাজাতে দেখে অবাক হয়ে যান সঙ্গীত পরিচালক সুদর্শনম মাস্টার। তিনি কাপড় দিয়ে সেই হারমোনিয়ামের রিড (কিবোর্ড) ঢেকে দিলেও দিলীপ একইভাবে বাজিয়ে যান। সুদর্শনম মাস্টারের উপদেশে শেখ চার বছর বয়স থেকেই দিলীপকে মিউজিকে ট্রেইনিং দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ধনরাজ মাস্টার হন তার টিচার। দিলীপ শেখা শুরু করেন পিয়ানো বাজানো।

সেই সময় বড় হয়ে দিলীপ হতে চেয়েছিলেন ইলেকট্রকিস অথবা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। এ আর রহমান তার স্মৃতিচারণে বলেন, মিউজিকের জন্য ততটা ক্রেইজি ছিলাম না যতটা ছিলাম টেকনোলজির প্রতি। ঘটনাচক্রে মিউজিক ও টেকনোলজি উভয়ের সম্মিলন হয় শেখরের সিনথেসাইজারের মাধ্যমে।

শেখর গিয়েছিলেন তার কাজে সিঙ্গাপুরে। ফেরার সময় তিনি এনেছিলেন একটি সিনথেসাইজার। সে সময় মিউজিক ও মুভি ওয়ার্ল্ডে সিনথেসাইজার ছিল অতি দুর্লভ একটি বাদ্যযন্ত্র। শিশু দিলীপ এই যন্ত্রে গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিনথেসাইজার নিয়ে বহু রকমের মিউজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকেন।

দিলীপের ছেলেবেলা ছিল খুব অভাব ও কষ্টের। একটি রহস্যময় রোগে মাত্র নয় বছর বয়সে তার পিতা মারা যান। ওই সময় সৃষ্টিকর্তার প্রতি দিলীপের ধারণা বদলাতে থাকে। পিতার চিকিৎসার জন্য টাকার অভাব, তার যন্ত্রণা, পরিচিত মানুষের তীব্র উদাসীনতা এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের উপেক্ষা দিলীপকে খুব কষ্ট দেয়। আরো কষ্ট দেয়, বিশেষত তার পিতার মৃত্যুর দিনটি। ওই দিনেই তার পিতার সুর আরোপিত প্রথম মুভিটি রিলিজড হলেও তা তিনি দেখে যেতে পারেননি। এগুলো এতই বেদনাদায়ক ছিল যে আজো এ আর রহমান এ নিয়ে কিছু বলতে চান না।

পিতা শেখর পেছনে রেখে যান তার স্ত্রী কস্তুরী (এখন করিমা বেগম) এবং তিন কন্যা ও এক পুত্র। কাঞ্চনা (দিলীপের বড়) এবং বালা (এখন তালাত) ও ইশরাত। এই তিন বোন ও মায়ের সংসার চালানোর সব দায়িত্ব এসে পড়ে বালক দিলীপের ওপর। ১১ বছর বয়সে তিনি ইলিয়ারাজা সঙ্গীত দলে যোগ দেন কিবোর্ড প্লেয়ার রূপে। ইতোমধ্যে তিনি গিটার বাজানো শেখেন। এভাবে এ আর রহমান চূড়ান্তভাবে মিউজিক ওয়ার্ল্ডে ঢোকেন। তাকে সব রকম অনুপ্রেরণা ও সাহায্য দেন তার মা যিনি চেয়েছিলেন প্রয়াত স্বামীর পদাঙ্ক যেন ছেলে অনুসরণ করে।

গানের ভুবনে ঢোকার ফলে দিলীপের আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও তিনি খুব নামকরা দু’টি শিক্ষায়তন পদ্ম শেষাদ্রি বাল ভবন এবং মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তবুও এমভি বিশ্বনাথন, রাজকোটি, রমেশ নাইডুর অর্কেস্ট্রায় কর্মরত থাকেন। এই অর্কেস্ট্রার সাথে তিনি বিশ্ব ভ্রমণে যান এবং জাকির হোসেন ও কুন্নাকুডি বিদ্যানাথনের সাথে বাজনায় অংশ নেন। তার প্রতিভায় অনেকে আকৃষ্ট হন এবং তাকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিকে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেন। এখানেই ওয়েস্টার্ন ক্যাসিক্যাল মিউজিকে একটি ডিগ্রি আয়ত্ত করার পর তিনি ইন্ডিয়ায় ফিরে আসেন। তখন তার স্বপ্ন পশ্চিমের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সাথে আধুনিক ইন্ডিয়ান সুরের সম্মিলন ঘটানো।

স্বদেশে ফিরে এসে তিনি প্রায় নয় বছর বিভিন্ন সঙ্গীত পরিচালকের সাথে কাজ করেন। কিন্তু একই ধরনের গানে দিলীপ খুব একঘেয়ে বোধ করতে থাকেন। তার সৃজনী প্রতিভা প্রকাশের কোনো সুযোগ তিনি পান না। এ সময় ইলিয়ারাজা সঙ্গীত দলের লিড কিবোর্ড প্লেয়ার ভিজি ম্যানুয়াল তাকে উপদেশ দেন অন্য কোনো ধরনের কাজ করতে।

দিলীপ তখন অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মে যোগ দেন এবং জিঙ্গল (বিজ্ঞাপনী স্লোগান) লেখা এবং এতে সুর দেয়ায় মনোনিবেশ করেন। প্রায় পাঁচ বছর তিনি বিজ্ঞাপনী ব্যবসায়ে কাজ করেন। ওই সময় তিনি ইসলামি আধ্যাত্মিক গানের দিকে ঝোঁকা শুরু করেন। তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ যে মিউজিক অ্যালবামটি তিনি প্রকাশ করেন এর নাম ছিল দিন ইসাই মালাই (Deen Isai Malai)। ইসলামি আধ্যাত্মিক গানের এই সঙ্কলনটি ছিল তামিল ভাষায়।

দিলীপ কখন এ আর রহমান হলেন? কেন তিনি হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন?
ওই অ্যালবাম প্রকাশের সময় ১৯৮৮ সালে অর্থাৎ দিলীপের বয়স যখন একুশ তখন তার এক বোনের গুরুতর অসুখ হয়। কোনো চিকিৎসাতেই কাজ হচ্ছিল না। সবাই যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তখন পরিবারের এক বন্ধুর উপদেশে তারা যান শেখ আবদুল কাদের জিলানি নামে মুসলিম পীরের কাছে। তিনি পীর কাদরি নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন।

পিতার রোগের সময় ওই একই পীরের কাছে দিলীপ পরিবার গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন পিতার অন্তিম সময় বলে পীর কিছু করতে পারেননি। এবার বোনের অসুখের সময় তারা দেরি করেন না। দিলীপ পরিবার যান পীর কাদরির কাছে। তার দোয়ায় অতি আশ্চর্যজনকভাবে দিলীপের বোন দ্রুত সেরে ওঠেন। পিতা ও বোনের অসুখের সময় সমাজের অবহেলা এবং তার বিপরীতে পীরের সদুপদেশ ও সাহায্য গভীরভাবে প্রভাবিত করে তরুণ দিলীপকে ধর্মান্তরিত হতে। তিনি ও তার পুরো পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। দিলীপ হয়ে যান এ আর রহমান।

এখন এ আর রহমান বলেন, ইসলাম আমাকে শান্তি দিয়েছে। দিলীপ রূপে আমি একটা হীনম্মন্যতায় ভুগতাম। এ আর রহমান হয়ে আমার মনে হয় পুনর্জন্ম লাভ করেছি।

দিলীপের মা জ্যোতিষবিদ্যায় বিশ্বাসী ছিলেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তিনি তার ছেলেকে নিয়ে যান এক জ্যোতিষীর কাছে এবং অনুরোধ করেন একটি শুভ মুসলমান নাম দিতে।

দিলীপকে দেখে ওই জ্যোতিষী তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম আবদুল রহমান এবং সংক্ষেপে এ আর রহমান রাখতে উপদেশ দেন।
দিলীপের মা এতে অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন, আবদুল রহমানের সংক্ষেপিত নাম তো এ রহমান হওয়া উচিত। এ আর রহমান হবে কী করে?
জ্যোতিষী উত্তর দেন, তার নাম আবদুল হলেও রহমানের আগে দু’টি আদ্যক্ষর রাখলে সে বিশ্বখ্যাত হবে। তাই শুধু (অ) নয়, এ আর (অ জ)-ই রাখতে হবে।

কস্তুরী ওরফে করিমা বেগম ঠিক তা-ই করেন। দিলীপের নাম রাখেন এ আর রহমান। পরে ইন্ডিয়ার তদানীন্তন টপ সুরকার নওশাদ আলী যিনি পশ্চিমি সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন তার সংস্পর্শে যখন এ আর রহমান আসেন তখন তিনি উপদেশ দেন আবদুলটা বদলে ফেলে বিখ্যাত তবলা বাদক আল্লা রাখার (Allah Rakha) নামে এ আর রাখতে।

এভাবেই এ এস দিলীপ কুমার থেকে ওরফে আবদুল রহমান ওরফে আল্লা রাখা রহমান ওরফে এ আর রহমানের পর্যায়ক্রমিক নামান্তর ঘটে।
এসব সাফল্যের জন্য এ আর রহমান সব কৃতিত্ব দেন সৃষ্টিকর্তাকে। তিনি বলেন, আমার মা আল্লাহর কাছে যেসব প্রার্থনা করেছেন তারই ফসল আমি। আমি যা তার কারণ হলো, প্রতিদিন সচেতন ও আন্তরিকভাবে পাঁচবার নামাজ পড়ি। আল্লাহ যা চান আমি তাই হবো। আমি তা জানি। তিনি আমাকে সবই দিয়েছেন। তিনি আবার সব কিছু নিয়েও নিতে পারেন। তাই যদি তিনি করেন তাহলে কোনো প্রশ্ন করব না, কোনো আপত্তি করব না। তাঁর সিদ্ধান্ত আমি মেনে নেবো। আল্লাহই আমার সব কিছু। তাঁর বিশাল সৃষ্টিযজ্ঞের একটি অতি ছোট অংশ আমি। তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন একটি বিশেষ মিশনের জন্য। সেই মিশনটি অর্জন না করলে আমি পাপ করব। এটাই আমার একমাত্র বিশ্বাস। আমার কাছে এটাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বের কোনো প্রলোভনই আমাকে নোয়াতে পারবে না। আমার জন্ম হয়েছে মিউজিকের জন্য। আমি মিউজিকের জন্যই বেঁচে আছি এবং শেষ পর্যন্ত মিউজিকের জন্যই বেঁচে থাকব। এটাই আল্লাহর ইচ্ছা। আমি শুধু এটুকুই জানি।

সাফল্যের শুরু গাথা
১৯৯২ সাল। তামিল পরিচালক মণি রত্নম একটি কফির বিজ্ঞাপনের জিঙ্গলসে সুর দিয়ে মাতিয়ে দেয়া ঝাঁকড়া চুলো। ২৫ বছর বয়সী ছেলেটিকে সুযোগ দিলেন তার রোজা ছবির সঙ্গীত পরিচালনার। তামিল ভাষায় তৈরি ছবিটি হিন্দিতে ডাব করা হয়েছিল। দুই ভাষাতেই রোজার সব ক’টি গান তুমুল হিট হয়। তার সাথেই প্রচারের আলো গিয়ে পড়ে এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক দিলীপ কুমার। তার দেয়া সুর কখনো ফপ করেনি। জীবনের প্রথম ছবির জন্যই পেয়েছিলেন রজত কমল (জাতীয় পুরস্কার) আজ পর্যন্ত এই রেকর্ড অন্য কোনো সঙ্গীত পরিচালকের নেই।

সঙ্গীতের বাঁকে এ আর রহমান
রহমানের মিউজিক্যাল জার্নির বেশ কয়েকটা মোড় আছে। আর প্রতিটা মোড়েই কোনো না কোনো বিশেষ ব্যক্তির সান্নিধ্যে এসে তার গতিপথ অনেকটা পাল্টে গেছে। প্রথমে রোজা, তারপর বম্বে সুপারহিট হওয়ার পরও চেন্নাই ছেড়ে বলিউডে আসার কোনো প্লান ছিল না তার। হিন্দি ভাষাটা রহমান বিশেষ বুঝতেন না। তাই ওই ভাষার সুর করতেও চাইতেন না। তামিল ছবিতে সুরারোপ করেই দিব্যি খুশি ছিলেন। কিন্তু রামগোপাল ভার্মাও নাছোড়বান্দা। রঙ্গিলার জন্য তারও রহমানকেই চাই। অনেক টালবাহানার পর রাজি হলেন রহমান। আর তার ক্যারিয়ারের একটা নতুন দিকও শুরু হলো। রঙ্গিলা ১৯৯৫ সালে সুপারহিট হলো। রহমানের হিন্দি ভীতিও কাটল। এর পরের মোড় আসে ১৯৯৭ সালে। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৫০ বছর উপলক্ষে বন্দে মাতরম-এ নতুন করে সুর দেন রহমান। ‘মা তুঝে সালাম’ গানটি প্রশংসার সাথে সাথে সমালোচনার ঝড়ও বয়ে এনেছিল। কিন্তু এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে, ওই গান এবং তার পিকচারাইজেশন মিলে পতাকা উত্তোলন হঠাৎ করেই কেমন যেন ‘কুল’ হয়ে গিয়েছিল।

শ্রেষ্ঠত্বের খাতায় এ আর রহমান তত দিনে দেশের মাটিতে রহমানের শ্রেষ্ঠত নিয়ে প্রশ্ন তোলার লোকের সংখ্যা হাতেগোনা। তার হিট ছবির লিস্ট পেশ করে জায়গা নষ্ট করার কোনো কারণ দেখছিল না। এবার এলো তার ক্যারিয়ারের আরো এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।


দিগিজ্বজয়ে এ আর রহমান
সঙ্গীতে বিশ্ব জয়ী রহমান শুরু হলো তার দিপেশ বিজয়। ২০০২ সালে রহমানের আলাপ হয় বিখ্যাত মিউজিক্যাল ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু লয়েড ওয়েবারের সাথে। অ্যান্ড্রু তার বন্ধে ড্রিমস নিয়ে তখন ভাবনাচিন্তা করছেন। সেই ব্রডওয়েতে রহমান সুর দিলেন। এর আগে অ্যান্ড্রু নিজের সব মিউজিক্যালেই নিজে সুর দিতেন। লন্ডনে টানা দু’বছর জাঁকিয়ে রাজত্ব করেছিল বম্ব্রে ড্রিমস এবং তার লিড সং শাকালাকা বেবি। তার পর আমেরিকাতেও মার মার কাট কাট ফেলে দেয় রহমানের সুর। এরপর ওয়ারিয়রস অফ হেভেন অ্যান্ড আর্থ নামে একটি চীনা ছবিতেও সুর দিয়েছিলেন তিনি। লর্ড অব দ্য রিংস এর স্টেজ অ্যাডাপটেশনেও রহমান সুর দেন। মানে স্লামডগ মিলিয়নেয়ারের আগেই আন্তর্জাতিক সঙ্গীত দুনিয়ার সাথে রহমানের প্রাথমিক পরিচয়টা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তখনো রহমান শুধু এক অ্যাম্বিশাস ইন্ডিয়ান মিউজিক ডিরেক্টর নামে পরিচিত ছিলেন। তাকে নিয়ে মাতামাতি আজকেই শুরু হয়নি। ছবিটা পালাতে শুরু করল ২০০৮ সালের জুন মাসের পর থেকে। হলিউড পরিচালক ড্যানি রয়েল চেন্নাই এলেন রহমানের সাথে দেখা করতে। উদ্দেশ্য, তার আগামী ছবি স্লামডগ মিলিয়নেয়ারের জন্য রহমানকে সই করানো। ড্যানি আমাকে দিন কুড়ি সময় দিয়েছিল পুরো সুরটা করার জন্য। কাজটা খুব শক্ত ছিল। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম।

সুর যেন প্রার্থনা
রহমানের কাছে যেকোনো গানের কথাই হলো ভগমানের কাছে প্রার্থনার সমান। সেই কথায় সুর বসিয়ে সেই প্রার্থনাকে আরো এফেক্টিভ করে তোলারই চেষ্টা করেন তিনি। আর এ কাজে টিম ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবাইকে সাথে নিয়ে বসে অনেকটা গল্প করার ছলে সুর তৈরি করার অভ্যাস তার। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক টিম নিয়েই কাজ করে চলেছেন রহমান। পুরনো সদস্যরা চলে যাননি এবং নতুন কোনো সদস্য যোগাতে দেননি।

শুধুই এ আর রহমান
এ আর রহমান যেকোনো নতুন শহরে গেলে তার প্রথম দেখার জায়গা হলো কোনো মিউজিক স্টোর অথবা কোনো মসজিদ। ওপরওয়ালার ওপর অগাধ আস্থা রহমানের। দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ার সময় বের করবেনই তিনি। ক্যারিয়ার রমরমিয়ে চলার সময়েও একটা পুরনো অ্যাম্বাসাডর নিজে ড্রাইভ করে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতেন। ২০০৩ সাল পর্যন্ত তার ১০০ মিলিয়ন রেকর্ড এবং ২০০ মিলিয়ন ক্যাসেট বিক্রি হয়েছিল। এই হিসাব অনুযায়ী তিনি বিশ্বের বেস্ট সেলিং মিউজিক আর্টিস্টদের অন্যতম। চেন্নাইয়ে রেকর্ডিং স্টুডিও ছাড়াও এ আর রহমান ফাউন্ডেশন এবং কে এম মিউজিক কনজারভেটরি তৈরি করেছেন রহমান।
২০০৯ সাল থেকে তাই বেছে বেছে অল্প কিছু ছবিতেই কাজ করবেন বলে ঠিক করেছেন। স্ত্রী সায়রা বানোর সাথে তার অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ হয়েছিল। তার তিন ছেলেমেয়ে কাথিজা, রহিমা এবং আমিন। তাকে নিয়ে কোনো প্রেমঘটিত স্ক্যান্ডাল নেই। সঙ্গীত পরিচালক মানেই তিনি পর্দার পেছনে। তার সুর হিট হলে তাকে নিয়ে মাতামাতি হবে। কিন্তু সঙ্গীত পরিচালক হয়েও যে গ্লোবাল ব্র্যান্ড হয়ে ওঠা যায়। তা রহমানের আগে কোনো ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক করে দেখাতে পারেননি। অস্কার জেতার পর ভারতবাসী এবং অনেক বিশ্ববাসীর হৃদয়ে সুরের মাধ্যমে নিজের জন্য পাকাপাকি আসন পেতে ফেলেছেন রহমান। হলিউডকে বাধ্য করেছেন বলিউড সম্পর্কে নাক সিটকানো মনোভাব ছাড়তে। রাজ ল্যারম্যান, রিডলি স্কটের মতো পরিচালকরা তার সাথে কাজ করতে আগ্রহী।

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger Widgets